শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-১

চিংড়ি সংরক্ষণ পদ্ধতি

এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

সাধারণ অর্থে বেশি সময়ের জন্য চিংড়ি সংরক্ষণকে প্রক্রিয়াজাতকরণ বলা হয়। এ পদ্ধতিতে গুণগত ও অবস্থানগত গঠনের কোনো পরিবর্তন হয় না। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াজাত করা গুণগত মানসমৃদ্ধ চিংড়ি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন পদ্ধতি নিম্নে বর্ণনা করা হলো-

ক. ভাজা বা অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষণ

চিংড়ির মৃত্যুর পর প্রধানত দু'টি কারণে চিংড়ি নষ্ট হয়ে থাকে, যেমন- রাসায়নিক বিক্রিয়ার কারণে নষ্ট হওয়া ও ব্যাক্টেরিয়া বা জীবাণুর আক্রমণে নষ্ট হওয়া। রাসায়নিক দৃষ্টিকোণ থেকে চিংড়ির মৃত্যুর পর দেহের কোষ থেকে অ্যামাইনো এসিড নিঃসৃত হয়। ফলে চিংড়ির খাদ্যগুণ ও স্বাদ বিনষ্ট হয় এবং ওজন হ্রাস পায়। অপরদিকে ব্যাক্টেরিয়া বা জীবাণুর আক্রমণে চিংড়ির মাংসল অংশে এনজাইমের জলায়ন (hydrolysis ) ক্রিয়ার সাহায্যে নানা ধরনের ফ্যাটি এসিড নিঃসৃত হয়, যা স্বজারণ পদ্ধতিতে (auto oxidation) কার্বনিল যৌগ উৎপন্ন করে, ফলে মাংসল অংশের পচনক্রিয়া শুরু হয় ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়। এ কারণেই চিংড়ি ধরার ৫ থেকে ৬ ঘন্টার মধ্যে চিংড়ির প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা উচিত।

রফের সাহায্যে দীর্ঘ মেয়াদে চিংড়ি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে চিংড়ি ও বরফের অনুপাত ১:১ (ওজনে) হওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজে বরফ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বরফের টুকরো অত্যন্ত ছোট বা পাতলা আবরণের মত হওয়া উচিত। অনেক সময় ব্যাক্টেরিয়াযুক্ত অপরিশোধিত পানি দিয়ে তৈরি বরফ ব্যবহার বা ব্যাক্টেরিয়াযুক্ত পাত্র ব্যবহারে চিংড়ির মান নষ্ট হতে পারে। এ ক্ষেত্রে চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণে ক্লোরিন মিশ্রিত পরিশোধিত পানির সাহায্যে তৈরি বরফ ব্যবহার করা উচিত এবং চিংড়ি সংরক্ষণে ও পরিবহণে ব্যবহৃত সকল প্রকার প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ ক্লোরিন মিশ্রিত পানি (৫ থেকে ১০ পিপিএম) দিয়ে ধোয়া উচিত। এ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষিত চিংড়ির ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা আক্রমণের সম্ভাবনা কম থাকে। চিংড়ি দীর্ঘকালীন সময়ের জন্য সংরক্ষণে সমুদ্রের পরিষ্কার লোনা পানি ০ থেকে ১ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় ব্যবহার করে ভাল ফল পাওয়া যায়। অনেক সময় গ্লুকোজ সিরাপ বা কর্ন সিরাপ প্রয়োগ করে তাপমাত্রা আরো কমানো হয়। এ ধরনের সংরক্ষণ পদ্ধতিতে চিংড়ির আকার অপরিবর্তিত থাকে এবং খরচও অপেক্ষাকৃত কম হয়।

বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জেট ফ্রিজিং পদ্ধতিতে চিংড়ি সংরক্ষণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে ক্রায়োজেনিক নাইট্রোজেন (cryogenic nitrogen) মাইনাস ৩২ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় মাল্টিজুম (multi- (zoom) ফ্রিজারের মাধ্যমে প্রতি মিনিটে সাত হাজার ফুট হারে সঞ্চালিত করা হয়। ফলে ঠান্ডা জমানো হাওয়া এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে চিংড়ি কোষের মধ্যে সঞ্চালিত হয় এবং অতি দ্রুত চিংড়ি সংরক্ষিত হয়।

খ. সিদ্ধ করা

এ পদ্ধতিতে প্রতি পাউন্ডে ১০০ টির অধিক সংখ্যক চিংড়ি লবণ জলে সিদ্ধ করা হয় এবং পরে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় এক সাথে বেশ কিছু পরিমাণ চিংড়ি বড় তারের ঝুড়িতে রেখে সেগুলো ফুটন্ত ব্রাইন বা লোনা জলে ১ থেকে ২ মিনিট সিদ্ধ করা হয় এবং পরে তারের পাত্রটি তুলে কোন বড় তারের জালের উপর ভালভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে অতি দ্রুত সেগুলো ঠান্ডা হয়। এ প্রক্রিয়াকে ব্লাঞ্চিং (blanching) বলা হয়। ব্লাঞ্চিংকৃত চিংড়িগুলো অল্প সময়ের জন্য ২০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় ঠান্ডা জলে ডুবানো হয়। এ প্রক্রিয়াকে গ্লেজিং (glazing) বলা হয়।

গ. কৌটাজাতকরণ

মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণে কৌটাজাতকরণ একটি প্রচলিত ও প্রাচীন প্রথা। এ প্রক্রিয়ায় ঠান্ডা করা চিংড়ি ব্রাইন বা লবণাক্ত পানি সহযোগে বায়ু নিরোধক পাত্র বা ক্যানে আবদ্ধ করে রপ্তানি করা হয়। ক্যান বা আবদ্ধ পাত্রে চিংড়ির গুণগতমান অবিকৃত রাখার উদ্দেশ্যে লবণপানিতে সাইট্রিক এসিড (০.২%) মিশানো হয়। এ সময়ে দ্রবণের পিএইচ (pH) এর মান ৬.৪ হয়ে থাকে। ক্যানগুলো পরবর্তী ধাপে প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে ০.৭ কিলোগ্রাম ব্যাসযোগে ও ১১৫.৩ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় ১৮-২০ মিনিট প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। কৌটাজাতকরণের ক্ষেত্রে লোহা বা তামার তৈরি ক্যান পরিহার করা উচিত। আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার উদ্দেশ্যে কৌটাজাতকরণ প্রক্রিয়ায় বা লবণাক্ত পানিতে প্রতি কিলোগ্রাম চিংড়ির জন্য ২৫০ মিলিগ্রাম ডাইসোডিয়াম যৌগ ব্যবহার করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় প্রক্রিয়াজাতকৃত চিংড়ি বা মাছ বিভিন্ন অবস্থায় রপ্তানি করা হয়, যেমন- মস্তকবিহীন, সম্পূর্ণ খোসা ছড়ানো, লেজ ছাড়া বাকী অংশের খোলস ছড়ানো, প্রভৃতি। মস্তকবিহীন চিংড়ি গ্রেড অনুসারে প্যাকিং করা হয়।

গ্রেড: গ্রেড হলো প্রতি পাউন্ড চিংড়িতে কত সংখ্যক চিংড়ি বিদ্যামান। যেমন- গ্রেভ ইউ-৫ এর অর্থ হলো প্রতি পাউন্ডে ৫টি বা তার কম সংখ্যক চিংড়ি বিদ্যমান। রপ্তানির ক্ষেত্রে চিংড়ির প্রচলিত গ্রেডগুলো হলো ইউ-১০, ইউ-১১ থেকে ইউ-১৫, ইউ-১৬ থেকে ইউ-২০, ইউ-২১ থেকে ইউ-২৫, ইত্যাদি

 

Content added By
Promotion